প্রধান সম্পাদকের কথা
ভ্রমণের নানা কথা
ভ্রমণপথ যখন বন্ধ, তখন বেশি করে মনে আসে ভ্রমণকথা।
ডানা মেলে ভ্রমণ বন্ধ কেন? দেশে অশান্তি, রক্তপাত, বিদেশে যুদ্ধের ঘনঘটা। রাশিয়া-ইউক্রেন, ইজরায়েল-প্যালেস্তাইন।
পহেলগাঁওয়ে শান্তিপ্রিয় ভ্রমণপ্রেমী মানুষ নিধন, বিদেশে, প্যালেস্তাইনের গাজায় নারী-শিশু নির্বিচারে গণহত্যা।
তবু ভুলি কী করে, এই পৃথিবীতে ভ্রমণস্বর্গ অশেষ। ক্ষত-বিক্ষত পৃথিবী যতই আমাদের মন রক্তাক্ত করুক, আশ্চর্য পৃথিবী কি কখনও ভোলা যায়!
আমি তাই বেরিয়ে পড়ার স্বপ্নে ভিসার আশায় বসে আছি। জুনেই পাব হয়তো। আমস্টারডাম, স্লোভানিয়া, ক্রোয়েশিয়া, সার্বিয়া, বসনিয়া, হেরজেগোভিনা, ভিসা এলেই বেরিয়ে পড়ব। ততদিন ভ্রমণহীন দিনগুলোয় পুরনো কিছু ভ্রমণকথা ভেবে কাল কাটুক।

Amarendra Chakravorty
বাংলার রূপ
ভ্রমণপরিধি যত বাড়ে মনের পরিধি তত বাড়ে। বাঁকুড়া-বিষ্ণুপুর ঘুরে এসে সুন্দরবনে সাতদিন থাকুন, কিংবা পুরুলিয়ার পর চলে যান জলদাপাড়া লাটাগুড়ির জঙ্গলে, দেখবেন আমাদের এই চিরচেনা বাংলার কী অপরূপ অচেনা রূপ! নানা ভাব নানা রূপের এ এক আশ্চর্য সংকলন। যত দেখি তত শিখি, যত যাই তত জানি। এভাবেই ভ্রমণে মনের জানলা খোলে। অন্তরে আলোর আনন্দ আসে।
এক পূর্ণিমায় যদি কেদারনাথ দেখেন, আরেক পূর্ণিমায় থাকেন কেরালার খাঁড়িতে, এবছর রাজস্থানের মরুগ্রাম দেখে পরের বছর যদি লাদাখিদের রান্নাঘরে বসে চা খান, এক পক্ষ ঘোরেন অরুণাচলে, আরেক পক্ষে আন্দামানে, একবার বারাণসীতে, আরেকবার বান্ধবগড়ে, একবার জিঞ্জিরায়, তো আরেকবার জিম করবেটে, তাহলেই ভারত আপনার মনে একটু একটু করে ধরা দেবে। বেড়ানোই তখন ভেঙে দেবে আমাদের মনের নানান বেড়া। শুধু অরণ্য, পাহাড়, সমুদ্র নয়, ভারতের হাটে-বাজারে মেলায়-উৎসবে ঘুরে বেড়ালেও আপনার এক শাশ্বত মহাভারত পড়া হয়ে যাবে।
জানুয়ারি ২০০৯
ট্রলারে জীবন
বুক ভরে শ্বাস নেওয়া, মন খুলে কথা বলা, ধীর লয়ে দিনযাপন- এ সবই যেন আমাদের জীবন থেকে হারিয়ে যেতে বসেছে।
এখন কে আর নিজের হাতে বন্ধুকে দীর্ঘ চিঠি লেখার কথা ভাবে! কে আর কাজের আওয়াজ ভুলে উদাসী হাওয়ার মতো নিজের খেয়াল-খুশিতে ভেসে যেতে পারে! আপনজনদের দেওয়ার মতো সময়েরও আজ বড় অনটন।
এই বাধ্যতামূলক বাস্তবতা থেকে ভ্রমণ আমাদের মুক্তি দেয়। দিনানুদিনের স্বার্থান্ধ সংসারজীবন থেকে ভ্রমণ আমাদের নিয়ে যায় আনন্দময় বিশ্বজীবনে। এ যেন স্বার্থপরতার ক্লেশ থেকে উদারতার শান্তির দিকে যাত্রা। দৈনন্দিনের বিষমতা থেকে প্রকৃতির সুষমার পথে পা বাড়ানো।
দূরেই হোক, অদূরেই হোক আর বহুদূরেই হোক, ভ্রমণে মানুষ নিজেকে খুঁজে পায়, ফিরে পায় নিজের সত্তাকে। ঘর হতে শুধু দুই পা ফেলিয়াও মিলতে পারে অরূপরতন। আমাদের ঘরের পাশেই তো আরশিনগর, সেথায় পরমাশ্চর্য পড়শির বাসা।
ঘরের পাশেই শুধু নয়, শহরের কাছেও কত অপরূপ সব অঞ্চল- আমাদের যাওয়াই হয় না। দক্ষিণবঙ্গে শুধু নদীপথেই এই তীরে ওই তীরে কত জলরঙে আঁকা ছবি! আমাদের দেখা হয় না। এক সময়ে এইসব নদীতে ঘোরা আমার প্রায় নেশায় দাঁড়িয়ে গিয়েছিল। মাতলা, বিদ্যা, রায়মঙ্গল, ঠাকুরান, সপ্তমুখানি কী সব নদীর নাম! নদীর ধারে একেকটা গ্রাম যেন জলরঙে আঁকা ছবি। যেন রূপকথা। নৌকো যত কাছে আসে ছবিও তত ভেঙে যায়, রূপকথার রেশ মুছে যায়। কৈশোরে সেও এক আশ্চর্য আবিষ্কার।
জানুয়ারি ২০১১
কাছে দূরে
পিঁপড়ের মতো সারিবদ্ধ ভ্রমণে মানুষের মন মানে না। ঝুনো নারকোলের ওপর কাঠপিঁপড়ের নিষ্ফল পরিক্রমায় মানুষের তৃপ্তি নেই। দেশের সঙ্গে কালের সঙ্গে দেখা না হলে, অচেনা পথ অচেনা পথিককে আপন করে নিতে না পারলে ভ্রমণ যেন সম্পূর্ণ হয় না। ভ্রমণ আমাদের মনের মুক্তিরই একটা মাধ্যম। যেখানেই যাই, ভ্রমণ তো করে মন।
ডিঙি নৌকোয় বাংলার খালে-বিলে নদীনালায় ঘুরে মন যদি ডানা মেলে, রেলে চড়ে জেলায় জেলায় রাজ্যে রাজ্যে ঘুরে বেড়িয়ে মন যদি পেখম মেলে, আকাশপথে অচেনা দেশে পৌঁছে মন যদি নবজন্ম পায়, সেটাই ভ্রমণ। বাহন বা গন্তব্যের তর-তম নয়, মনের আনন্দেই ভ্রমণের সার্থকতা।
পথের কথা বলতে শুনতে ভাবতে আমি ভালোবাসি। ক'দিন আগে মস্কো বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলার অধ্যাপিকা ডঃ ইরিনা প্রকোফিয়েভা তাঁর দেশের কয়েকজন বাংলার ছাত্রছাত্রী নিয়ে এসেছিলেন আমাদের বাড়িতে। শিক্ষার্থীদের প্রথমে 'হীরু
এ-মাসের ভ্রমণ পত্রিকাস্টলে পাওয়া যাচ্ছে
আজই সংগ্রহ করুন
অথবা বার্ষিক গ্রাহক হয়ে ঘরে বসেই নিশ্চিন্তে ভ্রমণ পড়ুনI

এ-মাসের ভ্রমণ
বর্ষ ৩৩ পঞ্চম সংখ্যা জুন ২০২৫ আষাঢ় ১৪৩২

অকাল বর্ষণে ছুগ আর সাংতি উপত্যকা
উৎপল দাস
অরুণাচলের পশ্চিম কামেং জেলার উপত্যকা ছুগ আর সাংতি। নদী, পাহাড়, আদিগন্ত ফুলে ভরা খেত আর উষ্ণ আতিথেয়তায় ভরা সোজা সরল মানুষের সান্নিধ্যে তাঁদের ঐতিহ্যময় উৎসবে একাত্ম হওয়ার ভ্রমণকথা।

নববর্ষায় তাড়োবা
সুচেতনা মুখোপাধ্যায় চক্রবর্তী
বর্ষায় তাড়োবা অরণ্যের কোর অঞ্চল বন্ধ থাকলেও খোলা থাকে বাফার অঞ্চল। নববর্ষার ধারাজলে তাড়োবা স্নিগ্ধ সজল মায়াবী হয়ে ওঠে। অরণ্যের না-মানুষ বাসিন্দারা মর্জি হলে বাফার জোনে এসেই দেখা দিয়ে যায়।

নীলচে সবুজ উটি-কুন্নুর
শতাব্দী দাশ
ঝকঝকে সুন্দর উটি-কুন্নুর বৃষ্টিতে ধুয়ে এক মায়াময় আবহ রচনা করে। নীলকে আরও নীল, সবুজকে আরও সবুজ দেখায় তখন। কুয়াশার রহস্য বোনা হয় ইতিউতি পথের বাঁকে। উটি থেকে কুন্নুর যেতে ৪০ মিনিট মতো লাগে।

জগদলপুর থেকে সাত ঝরনার পথে
জয়দীপ সরকার
তিরথগড়, চিত্রধারা, মেন্দ্রি ঘুমর, তামরা ঘুমর, চিত্রকোট, পারাপুর, মাওয়া-বর্ষায় এই সাত ঝরনার রূপই ফেটে পড়ে। তবে, ঘোর বর্ষায় ইন্দ্রাবতী নদীতে নৌবিহার বন্ধ থাকে।

নীল নদে ভেসে
অলোক দত্ত
অতুল ইতিহাস আর অকূল বিস্ময়ের নীলনদে ভেসে বেড়িয়ে আবু সিম্বেল, কোম ওম্বো, এডফুর হাজার হাজার বছরের প্রাচীন সব মন্দির দর্শন।

আমলাশোলের দিনরাত
অঙ্কুর হালদার
সবুজে সবুজ আমলাশোলের অরণ্য ঝরনা জলধারা বর্ষায় নতুন প্রাণ পায়। ঘাটশিলা থেকে আমলাশোল মোটামুটি ২৩ কিলোমিটার।

পশ্চিমঘাটের আনাচে কানাচে
অয়ন বন্দ্যোপাধ্যায়
থাট্টেকাডের গাঢ় সবুজ অরণ্যে অসংখ্য পাখি-পেঁচার সঙ্গেই বসত করে বিবিধ প্রজাতির সাপ ব্যাঙ কাঠবেড়ালি। ভাগ্যে থাকলে গ্রে ব্লেন্ডার লরিসেরও দেখা পাওয়া যায়। প্রখর গ্রীষ্মটুকু বাদ দিয়ে থাট্রেকাডে যাওয়া চলে বছরভর। এরাভিকুলাম অরণ্য বন্ধ থাকে ফেব্রুয়ারি থেকে এপ্রিল।

কুলু লাহুল পার্বতী তীর্থন
সুদীপ্ত দাস
উত্তুঙ্গ তুষারশৃঙ্গ, বরফজমা গিরিবর্ত্ম, উচ্ছল নদী, শান্ত হ্রদ, ঢেউ খেলানো বুগিয়াল, জমজমাট হিলস্টেশন, প্রাচীন নিরালা মন্দিরে দুর্যোগময় রাত্রিযাপন, পাহাড়ি মানুষের আন্তরিক আপ্যায়ন- ১১ দিনের মনভরানো হিমাচল ভ্রমণ।

বর্ষাভেজা দুয়ারসিনি
অমর নন্দী
সাতগুরুং নদীর ধারে সজল সবুজ দুয়ারসিনি পৌঁছতে নামতে হয় ঘাটশিলা স্টেশনে।