Skip to Content

Bhraman November 2025

ভ্রমণের আনন্দ, না-ভ্রমণের বিষাদ
13 November 2025 by
Bhraman November 2025
Mahasweta Samajdar

দেশের কোনও কোনও আজায়গায় শান্তির অভাব। কোথাও কোথাও হঠাৎ নিরাপত্তার ঘাটতি, কোনও কোনও শান্তির আশ্রয়ে হঠাৎ ভয় ও উদ্বেগ দেখি। সমাজে আকস্মিক অন্ধকারে রাজনৈতিক দলের ছত্রছায়ায় নানা অনৈতিক আঘাত মনকে দুমড়ে-মুচড়ে দেয়। দুশ্চিন্তায় মন ব্যথা পায়। মানুষের আশা-আকাঙ্ক্ষার উজ্জ্বল ভবিষ্যত ফুঁড়ে হঠাৎ হঠাৎ অন্ধকার নেমে আসে।


যেখানে আলো, যেখানে আশা, যেখানে সুন্দরের চির বসবাস, ব্যথাতুর মন নিয়েও সেদিকে বেরিয়ে পড়তে প্রাণ চায়। অনাহত অরণ্য, তুষারাবৃত হিমালয় আজও নিজ রূপে আমাদের বিক্ষত অন্তরে শান্তির প্রলেপ দেয়। ভারতে এরকম হৃদয় জুড়নো চিরন্তন জায়গা আজও অনেক ছড়িয়ে আছে। দূরে তো আছেই, কাছেও কম নেই।


ভ্রমণে মানুষের সঙ্গ পেয়ে মানুষ নতুন আশা, আশ্বাস, শাস্তি ও সাহস পায়। সেই দলবদ্ধ উৎসাহে আনন্দে অপরাজেয় মনুষ্যত্বের শক্তিতে জেগে ওঠে।


তবে অবাধ ভ্রমণ কি সব সময় সম্ভব? নিজের কথা বলতে পারি, গভীর দুঃখেও ভুলতে পারি না, প্যালেস্তাইনের গাজায় সব আশা বোমারু বিমানে ভস্ম হয়ে গেল। ইউক্রেন যাবার সব আয়োজন, ওদেশের সরকারি ট্যুর অপারেটরের সঙ্গে আলোচনায় দেশটার নানা গন্তব্য যখন স্থির, তখনই রাশিয়া-ইউক্রেনের বিধ্বংসী যুদ্ধের সূচনা। আকস্মিক আঘাতে বিধ্বস্ত আমার মনোনীত এলাকাগুলি আজও স্বপ্নের


ভ্রমণের বদলে দুঃস্বপ্নের দেশ হয়ে উঠল।


২০০৬ সালে পুতিনকে একেবারে সামনে থেকে দেখার দুর্লভ স্মৃতি আজ বুক জুড়ে শুধুই ক্রন্দন রোল তোলে। সামনের সারিতে সশস্ত্র রক্ষী-পরিবৃত পুতিন, দ্বিতীয় রো-তে বসে তাঁর কথার মধ্যে মাঝে মাঝেই চোয়াল শক্ত হতে দেখেছি।


নানা দেশের নানা রাজ্যের আনাচে কানাচে দেখে বেড়িয়েছি। কোথাও কোথাও দশ-পনেরো বারও গিয়েছি। তা সত্ত্বেও আফগানিস্তান আজও যাওয়া হয়নি বলে এখনও মনে আমার দুঃখ আছে। বিশেষ করে 'শাদা ঘোড়া'র জর্জিয়ান অনুবাদক, পরে বন্ধু, মানানা দুমবাদজের আমন্ত্রণেও কাবুল যাওয়া হয়নি। সে দুঃখ ভুলব কী করে? মন আরও হায় হায় করে, অখণ্ড যুগোশ্লাভিয়া দেখার ঘন ঘন আমন্ত্রণে যাত্রা যখন চূড়ান্ত হয়ে গেছে, তখনই শুরু হল সে-দেশের মূলত ছাত্র ও তরুণ সম্প্রদায়ের দ্রোহে প্রথমে রাজধানী বেলগ্রেড ও পরে গোটা দেশ ভেঙে চুরমার।


এবছর সেই যুগোশ্লাভিয়া ভেঙে হওয়া সাত রাজ্য ঘুরে দেখব বলে সাত দেশের ভিসা পেয়ে, মন যখন নতুন আশায় ভরে ওঠে, তখন ঢাকা থেকে ফিরে হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়লাম।


পনেরো-কুড়ি বছর আগে সুদানের মানুষজনের বিশ্বাস্য-অবিশ্বাস্য নানা গল্পে আকৃষ্ট হয়ে ভাবতাম সুদান যেতেই হবে। এখন আর ভাবি না। মানুষের নির্বিচার গণহত্যার দেশে দূর থেকে ক্রোধ ও প্রতিবাদ জানানো যায় চিৎকার করে, বেড়ানোর সাধ বা স্বপ্ন জ্বলে পুড়ে খাক হয়ে যায়।


এভাবে ভ্রমণের আনন্দ, না-ভ্রমণের বিষাদে ভরে উঠছে আমার জীবন। অথচ ভ্রমণ আমাদের জীবনের জয়গান, হঠাৎ কখনও মনে হয়, হয়তো মানুষের প্রাণভোমরা।




Bhraman November 2025
Mahasweta Samajdar 13 November 2025
Share this post
Tags
Archive