Skip to Content

Bhraman December 2025

শীতকালই তো শীতরাজ্যে যাবার সময়
14 December 2025 by
Bhraman December 2025
Mahasweta Samajdar

প্রধান সম্পাদকের কথা

শীতকালই তো শীতরাজ্যে যাবার সময়

টবেলায় বাটা কোম্পানির একটা দেখতাম, শীতকালেই সাজগোজ। সাজগোজ বলতে আমার পথের তৃষ্ণায় মনে হত গরম কোট, গলায় মাফলার, দু'হাতে উলের গ্লাভস- এইসবে সেজেগুজে শীতের দেশ বেরিয়ে পড়া। মনে মনে বিশ্বাস করতাম, শীতকালই তো শীতরাজ্যে যাবার ঋতু। সিমলা-মানালিই হোক, আর কাশ্মীর-কৌশানি বা দার্জিলিং-দিবাং ভ্যালিই হোক, শীতে এইসব শ্বেতরাজ্য আমাদের মতো সমতলবাসীর কাছে যেন একেকটি স্বর্গরাজ্য। তখন তুষারে চারদিক সাদা। পাহাড়চূড়ো বরফে ঢাকা। পাইন উইলো আপেল কমলা গাছও ছেঁড়া ছেঁড়া সাদা চাদর জড়িয়ে নেয়।


বড় হয়ে দেখেছি, একদিকে এই প্রাকৃতিক রূপের বিপুল বৈভব, আরেক দিকে সব কিছুই তখন সস্তা। আউলি, গুলমার্গ- এমন দু'য়েকটা জায়গা শুধু বাদ দিলে, শীতে শীতরাজ্যে হোটেল ভাড়ায় ভালো মতন ছাড় থাকে, গাড়ি ভাড়াও কিছুটা কম।


আরও দেড়-দু'মাস আগে কাশ্মীরে গেলে তো পথের ধারে, গাছে গাছে আপেলের পাহাড়। আপেল বাগান লাল আপেলের সুগন্ধে ম-ম। সুদর্শন কাশ্মীরি যুবকেরা আপেল পাড়ায় ব্যস্ত থেকেও আপনার সঙ্গে আলাপ জুড়বে। বাগান থেকেই দু-চার কেজি আপেল কিনতেও পারেন। কাশ্মীরে থাকতে থাকতেই খেতে চাইলে বেশি পাকা আপেল পাবেন। দূর শহরে নিয়ে যেতে চাইলে তুলনায় কম পাকা আপেল তারাই বেছে দেবেন। কিনুন না কিনুন, বাগানে খাওয়ার দু'-চারটে আপেল প্রীতি উপহার পাবেনই। তাতে কামড় বসিয়ে আবিষ্কার করবেন, মুখ গলা বুক রসে ভেসে যাচ্ছে। সেই সুগন্ধী আপেলকেই মনে হবে অমৃত। এরকম অমৃত ফল খেয়েছিলাম একমাত্র জাপানের পার্সিমন ফলের বাগানে। প্যান-এশীয় কবিসম্মেলনের শেষে দু'হাত ভরা পাকা পার্সিমন খেয়েও এমনই মনে হয়েছিল।


আমাদের ঘরের কাছে চিরসৌন্দর্যের দার্জিলিং যে শীতেই সবচেয়ে বেশি


সুন্দর, সেখানে তুষারাবৃত বিশাল কাঞ্চনজনা তার স্বর্গীয় শোভা নিয়ে রোজই তখন বিরাজমান, বছর কুড়ি আগে নিজে এটা আবিষ্কার করে অবাক হয়েছিলাম।


শুধু বরফরাজ্য কেন, এই শীতে সমুদ্রসৈকতও ভারি আরামের গন্তব্য। যাঁরা বেশি শীত সইতে পারেন না তাঁদের জন্য তো আরওই সুখকর। তবে সমুদ্র তখন তেমন তরঙ্গসঙ্কুল নয়, কিছুটা শান্ত।


বেড়াবার জন্য বরফরাজ্যকে ক্রমশ আরও আকর্ষক করে তোলার আয়োজন যেমন বিদেশে দেখা যায়, আমাদের দেশে তেমন দেখা যায় না। আলাস্কা সেপ্টেম্বরের মাঝামাঝি থেকে ঠান্ডার জন্য অগম্য হলেও


ডিসেম্বরের ভয়ানক শীতেও অরোরা বোরিয়ালিস দেখার জন্য পর্যটকদের


আকর্ষণ করতে উইন্টার ফেস্টিভ্যালের আয়োজন করে।


ঘরের কাছে-পিঠে পথের কথায় মনে পড়ল, নদী দেখলেই আমি নৌকোর খোঁজে এদিক-ওদিক তাকাতাম। গাছের গুঁড়িতে বাঁধা নৌকো তীরের কোথাও হালকা ঢেউয়ে ছলাৎছলাৎ করছে কি? কিংবা জোয়ারের জল নেমে যাওয়া নদীতীরের পলিতে নোঙর ফেলা নৌকো দেখা যাচ্ছে কি না। কখনও আবার মাঝি সুদ্ধ নৌকো পেয়ে নদী তোলপাড় করেছি।


কতদিন হাওড়া স্টেশনে দূর পাল্লার ভারী ইঞ্জিনের ট্রেন দেখে প্রাণ আনচান করে উঠেছে! ইচ্ছে হয়েছে উঠে পড়ি। দেখে আসি দিল্লি, বম্বে, অমৃতসর।


ভেতর থেকে এই বেরিয়ে পড়ার তাড়না, আর বাইরে থেকে অচেনা। পৃথিবীর হাতছানি মনে হয় কোনওদিন আমাকে ছেড়ে যাবে না।


আমাদের যেন মনে থাকে, আমাদেরই ব্যবহারে দুর্ব্যবহারে কীভাবে আমাদের এই আজন্ম চেনা পৃথিবী তার অঢেল সৌন্দর্য নিয়েও ক্রমশ বদলে যাচ্ছে। গত কয়েক দশকে যেখানেই দু'বার গেছি, দ্বিতীয় বারের দেখায় প্রথম দেখার আনন্দ আর বিস্ময় বেশ কিছুটা হারিয়েছি। সেই জন্যই যেন ভুলে না। যাই, প্রকৃতিকে সম্ভোগ নয়, মানুষ তার শুশ্রূষা পেতে চায়।

বিশেষ শীত সংখ্যা

সূচিপত্র

বর্ষ ৩৩ একাদশ সংখ্যা ডিসেম্বর ২০২৫ পৌষ ১৪৩২



www.amarendrachakravorty.com 

বেড়াতে যাবার কোনও তথ্য বা পরামর্শ চেয়ে অনুগ্রহ করে প্রধান সম্পাদকের ঠিকানায় ই-মেল করবেন না। 'ভ্রমণ' এর জন্য কোনও লেখা বা ছবি (বা সে-বিষয়ে প্রশ্নও) পাঠাবেন ন্য। এসব ক্ষেত্রে ফোন, ফেসবুক, হোয়াটসঅ্যাপও সম্পূর্ণ কাজলীয়। ভ্রমণ' প্রাসঙ্গিক যে-কোনও যোগাযোগ কেবলমাত 'ভ্রমণ' পত্রিকায় মুচিত দেশ আইডি বা টেলিফোন নম্বরেই করতে হবে। পাঠকের সহযোগিতা কাম্য।

Bhraman December 2025
Mahasweta Samajdar 14 December 2025
Share this post
Tags
Archive